Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ধান ফসল রক্ষায় ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা

ধান ফসল রক্ষায় ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা
মো: মোসাদ্দেক হোসেন১ ড. শেখ শামিউল হক২ ড. মো: মোফাজ্জল হোসেন৩
বর্তমান সময়ে বিশ^ব্যাপী খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি ধান উৎপাদনের সাথে সরাসরি জড়িত। খাদ্যনীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইফপ্রির প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে দ্রুত খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিকারী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উপরের দিকে থাকলেও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বালাইয়ের কারণে প্রতি বছর খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। খাদ্য উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য দানাদার ফসল উৎপাদন ও রক্ষার যাবতীয় কৌশল সুচারুভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ধান ফসল উৎপাদন ও রক্ষার বিষয় আলোচনা করতে হলে ইঁদুরকে বাদ রেখে সম্ভব নয়। কারণ উৎপাদন ও গুদামজাতকরণ উভয়ক্ষেত্রেই ইঁদুর খাদ্য প্রাপ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। উৎপাদন বৃদ্ধি ধরে রাখতে গিয়ে ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো এবং অতিরিক্ত উৎপাদন উপকরণ ব্যবহারের ফলে অন্যান্য বালাইয়ের মতো ইঁদুরের প্রকোপও বেড়ে গেছে।
ধান উৎপাদনকারী এশিয়ার প্রতিটি দেশে কৃষক, চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা ইঁদুরকে গুরুত্ব¡পূর্ণ বালাই হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এসব দেশে শুধু ধান কর্তন থেকে গুদামে রাখা অবস্থায় ২-২৫ ভাগ পর্যন্ত ইঁদুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তÍ হতে পারে। বাংলাদেশের প্রায় ১০ শতাংশ ধান, গম ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। গবেষণা থেকে জানা যায় তিন মাসের জন্য ধান গুদামে রাখা হলে ৫ খেকে ১০ ভাগ ইঁদুরের দ্বারা ক্ষতি হতে পারে। ইঁদুরের ক্ষতিকর প্রভাব সঠিকভাবে বুঝে উপযুক্ত দমন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে পারাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ইঁদুরের বংশ ও বাসস্থান
প্রতি ধান মৌসুমে একটি স্ত্রী ইঁদুর অনুকূল পরিবেশে প্রায় ২৪টি বাচ্চা দিতে পারে। এ পর্যন্ত দেশে ১৮ প্রজাতির ইঁদুর শনাক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ইঁদুরের মধ্যে কালো ইঁদুর, মাঠের বড় কালো ইঁদুর, নরম পশমযুক্ত মাঠের ইঁদুর ও ছোট লেজযুক্ত ইঁদুর ধানের ক্ষতি করে। মাঠ ফসলের ক্ষতিসাধনকারী একটি কালো ইঁদুরের ওজন ১৫০-২৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। আর বড় কালো ইঁদুরের ওজন আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের মধ্যে কালো ইঁদুর মাঠে ও গুদামে এবং মাঠের বড় কালো ইঁদুর নিচু জমিতে বেশি আক্রমণ করে। মাঠের কালো ইঁদুর ও মাঠের বড় কালো ইঁদুর গ্রীষ্ম মৌসুমে সাধারণত ফসলের ক্ষেত ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে গর্তে থাকে এবং গর্তের মুখ বন্ধ রাখে ও মাটি স্তূপ করে রাখে। একটি গর্তে একটি মাত্র ইঁদুর থাকে। বর্ষার সময় নিম্নভূমি প্লাবিত হলে এবং ফসলের জমিতে বৃষ্টির পানি জমলেই ইঁদুর গিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়।  
ধান ফসলে ইঁদুরের ক্ষতি ও দমনের সময়
 সাধারণত আগাম পরিপক্ব ধানের জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হয়। ইঁদুর ধান গাছের কুশি তেরছা কোণে (৪৫ ডিগ্রি) কেটে দেয়। গাছে শীষ বের হলে শীষ বাঁকিয়ে নিয়ে কচি ও পাকা শীষগুলো কেটে দেয়। ইঁদুর ধান ফসলে তিন মৌসুমেই আক্রমণ করতে পারে। তবে আমন মৌসুমে নিরাপদ আশ্রয়স্থল, পর্যাপ্ত খাদ্য এবং পানি সহজলভ্য হওয়া এবং মৌসুমের শেষভাগে বৃষ্টিপাত কম ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এসময়ে ইঁদুরের প্রজনন খুব বেশি হয়। ফলে ইঁদুরের সংখ্যা অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় বেড়ে যায়। ইঁদুরের প্রজনন শুরুর পূর্বেই ইঁদুর নিধন করা দরকার। তাই আমন মৌসুমে ইঁদুর দমনের উপযুক্ত সময় ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক। কারণ এ সময়ে মাঠে ইঁদুরের সংখ্যা কম থাকে। মাঠে প্রচুর খাদ্য না থাকায় ইঁদুর সহজেই এসময় বিষটোপ খেয়ে থাকে। আমন ফসল ক্ষতি করার আগেই ইঁদুর মারতে পারলে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে না এবং  ফসলের ক্ষতিও অনেক কম হয়ে থাকে। ধান রোপণের সময় ও রোপণের ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে (ধানে থোড় আসার পূর্বে) ধানের জমি ও আশপাশের এলাকার এবং জমিতে প্রথম পানি ছাড়ার দিন গভীর ও অগভীর সেচের নালায় ইঁদুর দমনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা
 ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতির ধরন, এর ব্যাপকতা ও দমন প্রক্রিয়া অন্যান্য বালাই থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও কৌশলগত। তাই স্থান-কাল-পাত্রভেদে কৌশলের সঠিক ও সমন্বিত দমন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ইঁদুর দমন করতে হবে। ইঁদুরকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য সবাই মিলে একযোগে বেশি জায়গার ইঁদুর নিধনে ফসল রক্ষা পায় ও ইঁদুরের সংখ্যা পরবর্তীতে আর বাড়তে পারে না। ইঁদুর দমন পদ্ধতিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ১) অরাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন  ২) রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন এবং ৩) জৈবিক পদ্ধতিতে দমন।  
অরাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন  
অরাসায়নিক পদ্ধতি হলো ভৌত ও যান্ত্রিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ইঁদুরের আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, যেমন- গর্ত খুঁড়ে ইঁদুর বের করে মেরে ফেলা । ইঁদুরের গর্তে পানি ঢেলে এবং মরিচের ধোঁয়া দিয়ে ইঁদুর বের করে মেরে ফেলা। জমির আইল চিকন (যেমন ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি), আগাছা এবং আবর্জনা ময়লা মুক্ত রাখা।
বাঁশের, কাঠের, লোহার ও মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করা। যেমন- কেচিকলে (করষষ ঃৎধঢ়), বাঁশের কল, বাঁশের ফাঁদ, জীবন্ত ইঁদুর ধরার ফাঁদ, মাটির ফাঁদ, মাটির চিটাগুড়ের ফাঁদ। উক্ত ফাঁদগুলো আবার দুই ধরনের-জীবিত ও মৃত (¯œ্যাপ) ফাঁদ। জীবন্ত ফাঁদে আবার একক ইঁদুর বা বহু ইঁদুর জীবন্ত ধরার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জীবন্ত ফাঁদে খাবার দিতে হয়। খাবার হিসাবে ধান বা চালের সাথে নারিকেল তৈলের মিশ্রণ তৈরি করে নাইলন বা মশারির কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে টোপ হিসাবে দিতে হয়। এ ছাড়াও শুঁটকি মাছ, সামুকের মাংসল অংশ, পাকা কলা ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। বন্যাপ্রবণ এলাকায় কলাগাছের ভেলার উপর ফাঁদ স্থাপন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। যখন দলগত বা সামাজিকভাবে বৃহৎ এলাকায় জীবিত ফাঁদ ব্যবহার করা হয় তখন ইহা খুবই কার্যকরী হয় এবং রাসায়নিক ব্যবহারের তুলনায় সাশ্রয়ী হয়।
এছাড়াও একই এলাকার ধান ফসল একই সময়ে লাগানো ও কর্তন করে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে এবং স্বল্প জীবনকালের ধান (যেমন ব্রি ধান৬২) চাষ করে এটি ফাঁদ ফসল (ঞৎধঢ় পৎড়ঢ়) হিসেবে ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করা যায়।
ট্র্যাপ ব্যারিয়ার সিস্টেমে ধান এবং অন্য যেসব ফসলে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি সেখানে এ পদ্ধতি কৌশলে ব্যবহার করা যায়। একটি টোপ ফাঁদ ফসল (আগাম পাকে) চাষ করে ইঁদুর ঢুকতে না পারে এ রকম বেড়া দিয়ে এটাকে ঘিরে দিয়ে বেড়ার মাঝে মাঝে ফাঁক তৈরি করে ফাঁকের ভেতরের দিকে একসাথে অনেক ইঁদুর ধরা পরে এ রকম জীবন্ত ফাঁদ পেতে রাখতে হবে। এই পদ্ধতির সফলতা পেতে হলে কাছাকাছি  সময়ে (১৫ দিনের মধ্যে) আশেপাশের সকল কৃষককে জমি লাগাতে হবে এবং বেড়ার টোপ ফসল আগাম পাকতে হবে। একটি ফাঁদ বেড়া (টিবিএস) চারদিকের ২০০ মিটার ব্যাসার্ধের ধান ফসল (১০ হেক্টর) রক্ষা করতে পারে।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন
রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমনে তিন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য যেমন- ১) একমাত্রা বিষটোপ ২) দীর্ঘমেয়াদি বিষটোপ এবং ৩) বিষ গ্যাসবড়ি ব্যবহার করা হয়।
একমাত্রা বিষটোপ
এ ধরনের বিষটোপ ইঁদুর একবার খেলেই সঙ্গে সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়। এরূপ সর্বাধিক পরিচিত বিষটোপ হচ্ছে গমে মিশ্রিত জিংক ফসফাইড (<২%)। এটি ব্যবহারের কৌশল হলো জিংক ফসফাইড ছাড়া শুধু গম কয়েকদিন দিয়ে অভ্যাস করে হঠাৎ একদিন জিংক ফসফাইড মিশ্রিত গম প্রদান করা। এক্ষেত্রে সমস্যা হলো বিষটোপ লাজুকতা দেখা দিতে পারে যদি মৃত ইঁদুরগুলো সরিয়ে ফেলা না হয়।
দীর্ঘমেয়াদি বিষটোপ   
এ ধরনের বিষটোপ ইঁদুর খেলে সঙ্গে সঙ্গে  মারা যায় না। ইঁদুরের শরীরে বিশেষ প্রতিক্রিয়া হয় এবং কিছুদিন অর্থাৎ ২ থেকে ১৪ দিন পর দুর্বল হয়ে গর্তের মধ্যে মারা যায়। যেমন- ল্যানির‌্যাট, স্টর্ম, ব্রমাপয়েন্ট, ক্লের‌্যাট ইত্যাদি। এখানে বিষটোপ লাজুকতা দেখা যায় না। বিষটোপ ছোট পাত্রে বা মোটা কাগজের পোঁটলা তৈরি করে সচল গর্তের মুখে রাখতে হবে।
গ্যাসবড়ি
গ্যাসবড়ি বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন করার মাধ্যমে ইঁদুর মেরে ফেলে। ইঁদুরের গর্তে বিষাক্ত অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বড়ি দিয়ে গর্তের মুখ ভালো করে বন্ধ করে দিলে ইঁদুর মারা যায়। এ জন্য ফারো সিস্টেমের নতুন সচল গর্তে গ্যাসবড়ি দিয়ে আশপাশের সকল গর্তের/নালার মুখ মাটি দিয়ে শক্ত করে বন্ধ করে দিতে হবে। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট ছাড়াও ফসটক্সিন ট্যাবলেট, হাইড্রোজেন/রাসায়নিক ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
রাসায়নিক রিপ্যালেন্ট
গুদামজাত বীজে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করলে তা রিপ্যালেন্ট হিসাবে কাজ করে। যেমন-গেছো ইঁদুর/ঘরের ইঁদুর ম্যালাথিয়ন ব্যবহারিত স্থান এড়িয়ে চলে। এছাড়া দেখা গিয়েছে যে, সাইক্লোহেক্সামাইড ব্যবহৃত এলাকায় ইঁদুরের উপস্থিতি একেবারেই কম।
জৈবিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন
জৈবিক পদ্ধতি হলো ইঁদুর দমনে অন্য জীবের সাহায্য নেয়া। ইঁদুরভোজী প্রাণীদের রক্ষা এবং বংশবিস্তারের যথাযথ ব্যবস্থা করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ ইঁদুর সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। প্যাঁচা, শিয়াল, বেজি, বন বিড়াল, সাপ, গুইসাপ ও বিড়াল জাতীয় প্রাণীর প্রধান খাদ্য হচ্ছে ইঁদুর। এদের     প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণের পাশাপাশি প্রজনন ও প্রতিপালন কার্যক্রমকে কৃষক পর্যায়ে উৎসাহিত করে এদের সংরক্ষণ ও বংশ বিস্তারের সুযোগ করে দিতে হবে।

লেখক : ১প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ২মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান, ৩মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কীটতত্ত্ব বিভাগ, বিআরআরআই, গাজীপুর-১৭০১, মোবাইল : ০১৭১৫০১১৩৫১, ই-মেইল :shamiulent@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon